Story and Article

Story and Article
4 min readSep 16, 2021

--

মেঘের পরে — ড . ময়ূরী মিত্র

আমার দেশটার আকাশে কালো মেঘ জমে কি আজকাল ? একদম কুচুং কুচ কালি কালো ? ছেলেবেলায় এরম মেঘ হলে ভাবতাম — মেঘ বুঝি দৈত্য দানো হয়ে গ্যাছে ! এবার বুঝি সে মেরে দেবে ফর্সা নীল ঈশ্বরমেঘগুলোকে | তখন কালো সাদা বা মন্দ ভালোকে বোঝাবার দুটি মাত্রই শব্দ ছিল আমার মগজে | দানো বা ঈশ্বর | সেই সূত্রে কালো মেঘ দানো মেঘ আর নীল আকাশের তুলো মেঘ হলো ঈশ্বরমেঘ |

মা ঠাকুমার মুখে সর্বক্ষণ তোশক বালিশ শুনে শুনে ঈশ্বরমেঘের একটা দুনম্বর নাম বের করে ফেলেছিলাম আমি | তুলোতোশক মেঘ | খুব ইচ্ছে করত তুলোতোশক মেঘগুলোকে বাঁচিয়ে দি | বাঁচিয়ে রাখি বরাবরের মতো | যেমন করে জলে বাতাসে পুরুষ্টু হয় গাছ | আর দৈত্য মেঘগুলোকে ফটাফট মেরে দি | জন্মের মতো সরিয়ে দি আকাশের দুনিয়া থেকে | মেঘ খুনের এক আজব কল্পনা বিস্তৃত হত তখন |

মনে আছে — — এইরকম ভাবাভাবির সময়ে বাবা এনে দিয়েছিলেন একটু দম দেয়া কলের রেলগাড়ি | তখনো অব্দি কলের উড়োজাহাজ বেরোয়নি কলকাতা শহরে | অন্তত আমার স্মৃতিতে নেই | তাই ঠিক করে নিয়েছিলাম , যেভাবেই হোক ট্রেনটিকেই ওড়াতে হবে আকাশের রাস্তায় রাস্তায় | তখন থেকে আজ আকাশ আমার আরেক পৃথিবী |

সারাদিন ধরে কলের রেল মেঝেতে ঘুরত বনবন | ঘোরাতে ঘোরাতে হাঁফিয়ে যেতাম ! সমতল থেকে কখন রেল উঠবে চেয়ারে | চেয়ার থেকে জানলায় | আর জানলা সে গাড়িকে ছুঁড়ে দেবে একদম আকাশে | সেই উড়ন্ত ট্রেনের কামরা থেকেই রাশি রাশি শস্ত্র ছোটাব আমি | নিকেশ করবো বদমাশ মেঘেগুলোকে ! পাপখুনের পর বড় আনন্দে ঈশ্বরমেঘের দল জাপটে ধরবে আমায় | মেঘঈশ্বরের বুকের মাঝে নিপিস হয়ে থাকব আমি !

রেল আজো ওড়েনি | মাটির ওপর লেটকে থেকে গেছে আমার খতমযন্ত্র ! বততমিজরা গিলছে দেশ ! ম্লান বসে ঈশ্বরমেঘ ! ওড়েও না | নড়েও না ! বিকল ! হান্ড্রেড পার্সেন্ট !

কাঁদি |

কাঁদার পর ভালো ঘুম আসে |

শুদ্ধি অসমাপ্ত থেকে যায় |

মেঘের যুদ্ধে ঈশ্বর হারে ?

চাঁদ আলোতে চান করি — ড . ময়ূরী মিত্র

পূর্ণ চাঁদ দেখলাম কি এখন ? বলতে পারি না | তিথি , বারের খবর কোনোদিন রাখিনি | তাই পূর্ণিমাই বলুন আর ভূতের চোদ্দদিনই বলুন — -continuously miss করতেই থাকি |

তবে আজ নিটোল গোল চাঁদ ভারি খুশি করল আমায় | মিষ্টি মিষ্টি পরমান্ন হাওয়া দিচ্ছে আর চাঁদের দুপাশে জমে থাকা হালকা মেঘ উড়ে যাচ্ছে | ধোঁয়াশা ঘুচিয়ে চাঁদকে যেন আরো উজ্জ্বল হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে |

আমার দার্শনিক ও Aesthetics এ মহাজ্ঞানী বাবা মাঝে মাঝেই বলেন — সুন্দরকে আরো সুন্দর করে দেখানো বা উপস্থাপন করাটা নাকি সবথেকে কঠিন কাজ | –জীবনে অন্তত দুবার তা বুঝেছিলাম ছোট ঠাকুমা মায়াবতীর কাছে |

ন দশ তখন আমার | গ্রামের বাড়িতে বর্ষাকালে বসে আছি লাল দাওয়ায় | বিদ্যুত বৃষ্টি সর্বস্ব নামল মহীরুহ কাঁপিয়ে | মহান হয়ে | মায়াবতীর সর্ষেতেল মাখা পেটে মুখ গুঁজে বায়না — -এই বৃষ্টিতে আমাকে পিঠে নিয়ে পুকুরে সাঁতার দাও | আমি জল খেলব | আমার রাগী এবং দারুণ সাহসী ঠাকুমা বললেন — -মানে ? জল কি ফুটবল ?

বললাম — আহা ! কথা বুঝতে পারো না কেন মায়া ? তোমার পিঠে চেপে আকাশের না ভূমির জল বেশি — তাই মাপব গো | আকাশজল ঝরছে | মায়া সাঁতার দিচ্ছেন | আমি সাপ হয়ে মাঝবয়সী ঠাকুমাকে জড়িয়ে | হাত বাড়িয়ে টেনে নিচ্ছি জলজ ফুল | চুমু খাচ্ছি গো | একবার আমার মায়াকে | একবার ফুলকে | দুটোই যে তখন আমার ফুটন্ত ফুল |

সেই থেকে বাবার কাকিমা মায়াকে আমি আর কোনোদিন ঠাকুমা মনে করিনি | চিরকাল ভেবে এসেছি — এ আমার দুর্দান্ত বন্ধু | ভালো ও সৎ বন্ধু — -যে কালীতলায় গাঁয়ের বউদের পিকনিকে দুমুঠো চাল ডাল বেশি নিয়ে যায় — যাতে ক্যাওড়াপাড়ার সবথেকে গরীব বধূটিও পিকনিকের খিচুড়ি খেতে পারে | কী যে মজা হতো তখন | জানেন — গাঁয়ে হয়ত কেউ কাঙালীভোজনের ব্যবস্থা করেছে | মায়া অবলীলায় আমায় পংক্তিতে বসিয়ে দিতেন | কী সুখে খেতুম আধসেদ্ধ খিচুড়ি | আজো যে ‘ Elite And sofisticated section ‘ পার্টিগুলো থেকে পালিয়ে বেড়াই সে কেবল আমার মায়ার জন্য | গরিবের ঘরে ভাত খেতে আজো গরিমা হয় আমার | বিশ্বাস করুন |

সদ্য বিয়ে হয়ে বাপের বাড়ি এসেছি বেশ কদিনের জন্য | খুব জ্বর আমার | খবর পেয়ে মায়াও এসেছেন | জ্বর গায়েও বিয়ের দামি সেন্ট মেখেছি | হঠাৎ দেখি আমায় শুঁকছেন মায়া | বেশ ভালোমতো শুঁকছেন | বুঝলাম পছন্দ হচ্ছে না তাঁর আমার চামড়ার নতুন গন্ধটি | পাশে শুয়ে একটু যেন দুম করেই বললেন — দুটো বাচ্চা দত্তক নিবি ? আমি মানুষ করে দেব | তোকে কিছু করতে হবে না |

হা হা হাসলাম — আমার নিজের বাচ্চা হবে তো ! তখন ?

মায়া — -নিজের বাচ্চার সাথে এর বিরোধ কোথায় রে ? এও তো নিজের | তাছাড়া নিজের বাচ্চার অভাব মেটাতে অন্যের গর্ভজাত নিলে সে মায়ের গর্ভকে অপমান করা হল না ? কেবল নিজের শূন্যতা ঢাকার জন্য সন্তান আনা ? ওরে এতে যে মানবসন্তান যে খেলনা হয়ে যায় রে |

বিড়বিড় করে একবার বোধহয় বলেছিলাম — তুমি যে জাত মানো মায়া | আমি কার না কার বাচ্চা আনব | তুমি ছোঁবে কী করে ?

এবার হাসিটা মায়ার | — — ওরে জাত মানি লোকচারে — -সন্তানের বিচারে নয় |

প্রশ্নে প্রশ্নে সত্তর বছরের বন্ধুটাকে আরো রক্তাক্ত করতে ইচ্ছে জেগেছিল | বললাম — -বড় হয়ে সে যদি আমায় না দেখে |

মেঘের আড়াল থেকে চাঁদবাক্য বাহির করলেন বাবার কাকিমা — –কিছু পাবি বলে সন্তান গর্ভে ধরার ইচ্ছেটাও পাপ | দেশে অনেক অনাথ বাচ্চা | তার দুটো মানুষ হল তোর হাতে | এই ভাববি |

আহা ! মরি মরি ! আমার কুপ্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে সেদিন অপূর্ব সুন্দর হয়ে উঠেছিলেন মায়াবতী | ক্রমশ কাতর হচ্ছিলেন নিজের সৌন্দর্যকে খুলতে | আমিও গোপন করিনি তাঁকে আরো সুন্দর করে দেখার লোভটাকে |

মায়াবতী — -আমার ছোট্টবেলার বন্ধু |

মায়াবতী — -আমার লক্ষ চাঁদের পুষ্পবৃষ্টি |

না বলে মরে গেছে |

এখন সে আরো সুন্দর |

খেলু করে আমার কোলে |

ছবি লাগবে না |

পুণ্য নিই মায়ার |

#storyandarticle

--

--

Story and Article
Story and Article

Written by Story and Article

বাংলা ভাষার সাহিত্য পত্রিকা । যে কোনো সময় লেখা পোস্ট করা যায় । ফেসবুক https://www.facebook.com/storyandarticle পত্রিকার লিঙ্ক https://storyandarticle.com

No responses yet